সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক পর্ব- ১

সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক পর্ব- ১

এ আই তরিকুল

  • বাজান!
  • বাজানগো বাজান! দেহুইন্নি কেডা আইছে!
  • কেডা রে?
  • বাজান! বাইরে আয়োইন আমগো ভাই আইছে
  • আমার শাহিন?
  • শাহিন আইছে?
  • হুঁ বাজান! লগে কারে জানি আনছে?

কিরে বাপ, কয় আছিলা এতদিন? একটা মোবাইল তো করতারতা! তর চিন্তায় তর মা পাগল হয়া গেছে সারাদিন হাতেহানো তরে খুজে। যাক, বাপ তুই আয়া পরছছ, অহন আমগোর আর কোনো টেনশন নাই। সখিনা! মা তুই তর মারে খোজতে যা আজকা মনে হয় তর মা দূরে গেছে না। তর রহিমা খালার বারিত গেছে আছে। যা- রে- মা- খুঁজ- গা, যা।

কিরে বাপ! তর লগে এই ফুরি কেডা? তারে যে চিনলাম না। মাথা নিচ করে শাহিন বলেছে, বাজান সে তুমার ছেলের বউ! শাহিনের বউ কদমবুসি করতে শশুরের পা ছুতে গেল। শশুর পা টান দিয়ে এক কদম পিছনে চলে এসেছে।

থাম! আমার পুতেরে আমি কিনু বিয়া করাইছি না যে বিয়া করাইছে তার পায়ে ধরো গা  আমার হাত পায়ো ধইরা কোনো লাভ নাই এই বাড়িত আমার পুত ছাড়া অইন্য কেউ ডুকাতারতো না। যদি লগে কিনু মাইট্টা হুর লয়া ডুহে তাইলে তার ত যাগা নাই অই লগে আমার পুতেরও যাগা নাই, কয়া দিলাম! কিন্তু (খুব ক্ষেপা)

এ যে যেই সেই শশুর না। তার নাম আকবর হোসেন, মুখে মধু অন্তরে বিষ। সন্তানের প্রতি গভীর ভালোবাসা আছে। বয়স পঞ্চাশের কম হবে না, মাথায় আধা-পাকা চুল। মুখে বিহারী স্পাই দের মত বড় গোঁফ। দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে আসছে বলাটা ভুল হবে বরং তার এই দারিদ্র্যতাই ভালো লাগে।
সে দারিদ্র্যতাকে উপভোগ করতে চায়, কাজ-কর্মে আলসেমী করে না, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে জানে। সে একজন বেবী চালক। রোজগারের সবটুকু সংসারে ব্যয় করে ফেলেন, তার কোনো ডিপিএস, বা সেভিং হিসাব নাই।

একটা কিস্তি আছে, সাপ্তাহিক এক হাজার টাকার। ছোট বেলায় মা হারিয়েছিল, বাবার কাছে পালিত হওয়ার সময় তাকে সত মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে হত। খুব কস্ট করে মেট্রিক পাস করে কলেজে ভর্তি হয়ে পরে আর কলেজে যান নি আকবর হোসেন। ঢাকা শহর থেকে গাজীপুর বেশি দূরে নয়, সে সময়ের শহর-টু-গ্রাম বেবি চালাবেন বলে ভাবছেন। ভাড়ায় বেবী চালানো শুরু করে দিয়েছেন। কি আর করবে বাবার দ্বিতীয় সংসারের সদস্য বেড়েছে, আত্মমর্যাদা বোধগম্য হতে নিজের খরচ নিজে চালায়। রহিমা খালা খুব ভালো মেয়ে ছিলো। টিউশনি করে আশেপাশের চার গ্রামের মানুষের কাছে রহিমা খালা তখন খুবই পরিচিত।

রহিমা খালার প্রাইমারী স্কুলে চাকরীও হয়েছে। এদিকে আকবর হোসেন তার বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজতে বলেছিল রহিমা কে। পাত্রীর তো অভাব পরে না, কিন্তু কে দেবে তার মেয়েকে বেবী চালকের কাছে বিয়ে? আকবরের জন্য উপযুক্ত মেয়ে পাচ্ছিলেন না রহিমা, অবশেষে রহিমা চিন্তা ভাবনা করে দেখলেন তার বোন মনোয়ারাকে আকবরের সাথে বিয়ে দিলে কেমন হয়। আকবর ছেলে খারাপ না, শিক্ষিত ছেলে। হয়তু বেবী চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।

রহিমা একজন মেয়ে হলেও সে তার পরিবারের গুরু দায়িত্ব পালন করে। সবাই তার কথা শুনে। রহিমার উপর আস্হা রেখে মনোয়ারাকে বিয়ে দিয়ে দেন আত্মীয়রা। সে থেকেই রহিমা খালা হয়ে গেল।

আকবর-মনোয়ারা দম্পতির দাম্পত্য জীবনে বাহ্যিক বিলাসিতা না থাকলেও মনে মনে খুব বিলাসিতা ছিল। মনোয়ারার ইচ্ছা ছিল বড়লোক বাড়িতে বিয়ে করার, ইচ্ছে পূরন হয়নি। অধিকাংশ মেয়েদেরই এই ইচ্ছাটা থাকে, শুধু মেয়ে না মেয়ের চৌদ্দ গোষ্টিরই থাকে এইটা।

 

পর্বঃ ২ লিংক

পর্বঃ ৩ লিংক

পর্বঃ ৪ লিংক

পর্বঃ ৫ লিংক

Be the first to comment

Leave a Reply