সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক পর্ব- ৬

সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক পর্ব- ৬

এ আই তরিকুল

সকাল হলো, পাখিদের গানে আর শিশু কিশোরীদের চিকুত কুত খেলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। কিচিরমিচির শব্দে দারুন অনুভব করছি, আজকের দিনটাকে বিশেষ কোনো দিন মনে হচ্ছে। দরজা খুলে বাহিরে বের হলাম, আজ সূর্যের আলো খুব প্রখড়, চোখ মেলে তাকাতে পারছি না। পুকুরপাড়ের দিকে যাচ্ছি, পুকুরপাড়ে যেতেই সুমনের সাথে দেখা, আজকের দিনের শুরুটাতে তার সাথেই প্রথম দেখা হলো। সে পুকুরে খাদ্য দেয় আর (তিরি রিরি রি রি) গুনগুনিয়ে গান গায়।

  • সুমন! কি কি খাদ্য দেও পুকুরে?
  • গরুর গোবর, আর খৈল দেই
  • ও খুব ভালো
  • দাও! দাও
  • কতক্ষণ দিতে হবে?
  • শেষ! দুইমিনিট লাগবো

তুমি তো মানবসেবায় যেমন প্রাণী সেবায়ও তার চেয়ে বেশী দরদী।
জ্বি ভাইজান!

বাড়ির এতসব কাজ করলে লেখা পড়া করো কখন? “রাতে! সন্ধার পর থেইকা পড়তে বসি, দশটা পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করি কিন্তু তার আগেই কুপি বাত্বির তেল শেষ হয়া যায়। আর তখনই আমার ঘুম চেপে ধরে কোন সময় যে ঘুমিয়ে পড়ি সেটা নিজেও জানি না। হা.. হা..হা..!

সারাদিনে তো আর কাজ কর্ম কম করো না, পরিশ্রমের পাশাপাশি বিশ্রামও নিয়ো।

  • হুঁ.. ( মাথা নেরেছে)
  • ভাইজান, ভাবি কি এখনও ঘুমিয়ে আছে?
  • হুঁ..!  ডেকে আসছি, উঠেনি, সে আরো ঘুমাবে বলছে।

ভাবি মনে হয় ডাকাত দেইখা ভয় পাইছিলো?
হুঁ, অনেক ভয় পেয়েছিল, সবাই ভয় পেয়েছিলাম।
চিৎকার দিয়ে উঠেছিলো তুমার ভাবি, ডাকাতরা যখন টেম্পোওয়ালার পেটে ছুরি ডুকিয়ে দিয়েছিল তখন আতঙ্কিত হয়েছিলাম।

ভাইজান!
হুঁ,
আপনেরা কয় যাইতে চাইছিলেন?
আমরা শহরে যাচ্ছিলাম, কাজের জন্য
ও.. কী কাজ করেন্?
কিছু করি নাহ্, শহরে গিয়ে কাজ করবো।

কালকে থেকে আজ অব্দি যা প্রশ্ন সে করেনি-এমন সব প্রশ্ন করছে আজ।
আমিও উত্তর দিয়ে যাচ্ছি,
জানি এ বয়সে
তারা একটু বেশীই প্রশ্ন করে।

যাক গিয়ে, বলেছি সব।

এখন তো বলছে জেঠার কাছে বলে দিবে।
না ভাই!  দয়া করে বইলো না। ভাই-না-ভালো

কার কথা কে শুনে, সে তো বলেই দিয়েছে।
তার জেঠা গ্রাম সরকার তুষি কে জিজ্ঞেস করেছে। তোমরা কি বিবাহিত?
তুষির কোনো উত্তর নাই, চুপ করে আছে সে।
ভয় পাচ্ছিলো তখন, বুঝতে পেরেছি।
ভাবছে কী বলবে?

অবশেষে তুষি সত্যটাই বলে দিয়েছে।
আর সবটুকুই বলেছে।
সে হিন্দু আর আমি মুসলমান হওয়ায় বিয়ে করতে পারেনি।

গ্রাম সরকার একটু রেগে গিয়েছিল
তুষির সাথে জোর গলায় কথা বলতে শুনে সবাই চুপ হয়ে দেখতে এসেছে।
গ্রাম সরকার রাগী ছিলেন কিন্তু মহৎ লোক।

শাহীন-তুষির ব্যাপারটা খুব হৈচৈ ফেলেছে গ্রামে।
মুখে মুখে কথার ছড়াছড়ি হতে হতে গুজব রটেছে যে, গ্রাম সরকার এক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছে।

গ্রাম সরকারের বিরোধীরা গ্রাম সরকারকে শক্ত হাতে দমন করার অঙ্গিকার করছে।
পরিকল্পনা করা হলো:
রাতে দলবেঁধে সবাই মিলেমিশে এক সাথে গিয়ে গ্রাম সরকারের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিবে।

এদিকে গ্রাম সরকার কাজী সাহেবকে ডেকে বাড়িতে এনেছেন।
তাদেরকে কী করা যেতে পারে কাজী সাহেব?
কাজী সাহেব বলেঃ
এরকম অনেক বিয়ে আমি পড়িয়েছি, কোনো সমস্যা হবে না, হ্যা।
কাজী সাহেব শাহীনকে জিজ্ঞেস করেছে তুমি কি মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাও?
শাহীনঃ জ্বী, কাজী সাহেব।

মেয়েকেও জিজ্ঞেস করা হলো
তুমি? বিয়ে বসবে?
হুঁ
হিন্দু-মুসলিম বিয়ে হয় না।
কি করবে ভেবে দ্যাখো

আমি রাজি

ঠিক আছে

বিয়ের জন্য আগে মুসলিম হতে হবে, তারপর বিয়ে।

তুষি ইসলাম গ্রহণ করেছে,
এখন তার নাম তাহমিনা খাতুন।

সন্ধার পর বিয়ে, এখন বিকেল চারটা বাজছে।

ওদিকে-যে-গুজব-রটে-গেছে
তা এখনো জানেনই না গ্রাম সরকার।

আগামী পর্বেঃ ৭ম পর্ব

Be the first to comment

Leave a Reply