সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক পর্ব- ৩

সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক পর্ব- ৩

এ আই তরিকুল

আকবর-মনোয়ারা দম্পতির কোলে। জীর্ণ শীর্ণ এক ছেলে শিশুর জন্ম হলো, ওজন মাপা হলো না, নব্বই দশকে বাচ্চার ওজন মাপা হতো না। সিজার বা অপারেশনেরও প্রয়োজন ছিল না। ডাক্তারদের সরল মনে ক্রুটি ছিল না। সিজারের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উপায় জানা ছিল না, সেবাই তাদের ধর্ম ছিল।

সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা; দ্রব্যমূল্যের চড়া দাম। আকিকাহ দেওয়া যাবে না। নাম রাখা হলো শাহীন (ছদ্মনাম) মেয়ে হলে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যেত, বিয়ে দিলেই শেষ। ছেলেদের বড় হতে দেরি লাগে (চলিত ভ্রান্ত কথা সমূহ) অনেকেই বলাবলি করে। ছেলে মেয়ে যাই হোক সবই আল্লাহর ইচ্ছা।

জন্মাজন্মি নিয়ে এমন ধারনা পাল্টাতে হবে, জন্মনিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে না। খোদার হাতে! শাহীন বড় হলো, ভুল! সবেমাত্র প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। বড় তো সেদিন হবে যেদিন সে বিয়ে করবে চলিত ভ্রান্ত মতবাদ)

এটাও ভ্রান্ত! তবে সঠিক কোনটা? মানুষ বড় হয় কবে? আকার আয়তনে বা বয়সে মানুষ বড় হয় না। মানুষ বড় হয় তখন, যখন তার মন বড় হয়। আমরা মানুষ হিসেবে আমাদের মস্তিষ্ক অন্য প্রাইমেট দের থেকে বড়। আমরা এইচ স্যাপিয়েন্স প্রজাতি। আমি মনে করি আমাদের মধ্যে যাদের ছোট মন তারা হোমিনিন-বিশেষত অস্ট্রালোপিথেসিন, যাদের মস্তিষ্ক এবং শারীরিক গঠন অনেকটা পূর্বতন অ-মানব বানরের মতো, যাদের হমো প্রজাতির হোমিনিন না বলে “মানব” বলা হয়।

মানুষের মন বড় হওয়াই উচিত। মন বড় করার উপায় কী? পাওয়ার আশা কম করতে হবে; দেওয়ার চেষ্টা বেশী করতে হবে।আমাদের জন্ম থেকেই আমাদের মস্তিষ্ক বড় থাকে, কিন্তু ছোট হওয়ার কারনটা হচ্ছে আমরাই, আমাদের পরিবেশ।

যাই হোক শাহীন বড় হয়ে গেছে! সুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট সে প্রেমে পরেছে সুন্দরী মায়াবী চেহারা মেয়েটার ঝামেলা শুধু ধর্মের! মেয়েটা হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরিবারের। নাম তুষি (ছদ্মনাম)

সেও আকৃষ্ট ছেলেটির প্রতি মুসলিম ছেলের প্রেমে পরে পরিবার-ধর্ম সব ভুলে গেছে। ধর্ম-কর্মে বেশী একটা মন বসে না মন শুধুই যে শাহীন রে চায়, আর শাহীনও যে তুষি কে চায়। বর্তমানের প্রেমের মত ছিল? মাল্টিপ্লাগস্? প্রেমিকার হাত ধরে বসে থাকা? অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর বিশেষ আবেদন? না! ভীন্ন ছিল। চিরকুট চালাচালি হতো। প্রেম ছিল কাব্য-কবিতায় ডায়েরী লেখা হতো। দেখা হতো নদীর পাড়ে, যখন তুষি কাপড় ধুতে যেত, জল আনতে যেত। তুষির বিয়ের জন্য সম্বন্ধ আসলো, নরসিংদীর শিব বাড়ি থেকে ছেলে মস্ত বড়লোক, জুয়েলারীর ব্যবসা। সম্বন্ধ পাক্কা করে দেওয়া হলো।

বিয়ের সময় ঠিক করা হচ্ছিলো, পরদিন নদীর পাড়ে শাহীনের সাথে সব ঘটনা খুলে বলা হলো তুষির। আজকের গল্পের সিদ্ধান্ত
পালাবো। কোথায় থাকবো? কি করবো পরে দেখা যাবে। আজ সন্ধায়ই পালাবো সন্ধা পূজার একটু পরই পালালাম কেউ দেখেনি
বড়’দা দেখে ফেলল! দাদাকে ভুলভাল বুঝিয়ে চলে আসলাম বড়’দা বলল ব্যাগ লয়া কয় জাস? ব্যাগ রাইখা যা। ব্যাগ রাইখাই চলে আসলাম।

শাহীনের সাথে কথা ছিল শেউড়া ঘাছের নিচে গোসল করার ঘাট এ দাড়িয়ে থাকবে সে। সাথে একটা নৌকা থাকবে, নদী পাড়াপারের জন্য। কথামত শাহীন সেখানেই ছিল। সাথে মুসলেম কাকা বাবার খুব পরিচিত মাঝি। নাদী পারাপার হলাম কেউ আটকালো না। নদী পার হয়ে শহরের রাস্তা পর্যন্ত যেতে হলে টেম্পু করে যেতে হবে। সন্ধা নেমে গেছে, অন্ধকারে সব ঢেকে গেছে রাস্তায় ডাকাতের ভয় নিয়ে টেম্পু চালাতে হবে। এখন ভাড়া দিগুণ! দিগুণ ভাড়াতেও আমরা রাজি ছিলাম।

পর্ব- ৪ঃ লিংক

Be the first to comment

Leave a Reply