সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক (৪র্থ পর্ব)

সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক পর্ব- ৪

যেই কথা সেই কাজ, খাপে-খাপ-কথার-মাপ, আমরা ডাকাতের মুখোমুখি হলাম। ডাকাতদের একজন টেম্পোর কাছে এসেই টেম্পো চালকের পেটে ছুরি মেরে দিল। ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম, আমরা ভীষন ভয় পাচ্ছি, তাই যা আছে চাওয়ার আগেই দিয়ে দিতে চাইলাম, শাহীন আঙুলের খোঁচা দিয়ে ইশারা করলো যেন না দেই। বিষয়টা ডাকাত সদস্যের একজনের চোখে পড়ে। চাকু মারতে চেয়েছিল
“এই নেন, যা আছে সব নিয়া যান দয়া করে আমগরে মাইরেন না যে” (কেঁদে কেঁদে)

টেম্পো চালক সামনের সিটে শুইয়ে পরেছে কাতরাচ্ছে, আহ্! ওহ মাগো মা! মা রে ওহফ্ফ!
ডাকাতেরা সব নিয়ে গেছে, শাহীনকে খুব ভালো করে চেক করে নিয়েছে এক পয়সাও অবশিষ্ট থাকলো না নোট, পয়সা সব নিয়ে গেছে। এদিকে কাতরানো টেম্পু চালকের রক্ত ঝরছিল কি-না বুঝা যাচ্ছিল না। তারপরও আন্দাজ করে আমার ওড়না দিয়ে বেঁধে দিতে চেয়েছি, টেম্পো চালক না করলো। সে তার টেম্পোর গ্লাস মুছবার গামছা টান দিয়ে বের করে দিয়েছে,  আমি আর শাহীন তার পেটে সুন্দর করে বাঁধতে পারলাম না। তার আগেই আবার হাজির ডাকাতেরা, আমার হাত ধরে টানতে শুরু করেছে। শাহীন জোর আবেদন করে যাচ্ছে “আল্লাহর ওয়াস্তে আমার বউরে ছাইরা দেইন, পায়ে পরি, দয়া কইরা ছাইরা দেইন”


শাহীন ডাকাতের পায়ে ধরে, হাতে ধরে কোনো কাজ হয় না। ডাকাতের মন এত নরম না যে, হাতে পায়ে ধরলে ছেড়ে দিবে। ডাকাত সর্দার খবর পাঠিয়েছে সবাইকে চলে যেতে। এলাকার মানুষ খোজ পেয়ে গেছে, ডাকাতদের ধাওয়া করতে তৈরি হচ্ছে তারা। “এ-ই সবাই আয়া পর, এইহানো এত সময় নস্ট করুন জাইতো না, তাড়াতাড়ি আ”

ডাকাতদের কথা-কাজ দেখে বুঝতে পারছি, ওরা নতুন ডাকাত। ডাকাত সদস্যদের বয়স আঠারো থেকে শুরু করে পয়ত্রিশ, চল্লিশ-পয়তাল্লিশ বছর হবে।
পরনে লুঙ্গি উঁচিয়ে পরা, (লেনটি বাঁধা ছিল) কয়েকজন হাফপেন্ট, সেন্টু গেন্জি আবার অনেকেই খালি গায়ে, মুখ বাঁধা গামছা দিয়ে। শরীরের গঠন ভালো, সবাইকে শক্তিশালী মনে হয়েছে, কয়েকজন জীর্ণ দেহের কিন্তু দৃঢ় মনোবল আছে।


গামছা দিয়ে মুখ বাঁধা না থাকলে মনে হয় চিনতে পারতাম। গ্রামবাসীর ভয়ে আমাকে ছেড়ে পালালো ডাকাতেরা। হৈ! হ্যৈ.. ধর! ধর! মিছিলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামবাসীরা চলে আসছে আমাদের এখানে, জিজ্ঞাসা করছে! আমাদের কিছু হয়েছে কি-না? টেম্পো চালকের অবস্হা দেখে সবাই বুঝতে পেরেছে, আমরা দূর্ঘটনার স্বীকার। এলাকাবাসীর সিদ্ধান্ত হয়ে গেল তারা আজ রাত্রে আমাদের কোথাও যেতে দিবে না। পালিয়ে এসেছি এটা এখনও কেউ জানতে পারেনি। ডাকাতের চেয়েও কম ভয় লাগছে না এই মিছিলের মানুষদেরকে (রক্ষা করো ঠাকুর)

আল্লাহর অশেষ কৃপায় ডাকাতের হাত থেকে বেঁচে গেলাম, কিন্তু এবার এলাকাবাসীর হাতে পরলাম। তারা আমাকে নানান প্রশ্ন করছিল। আমি বললাম “প্রশ্ন-টশ্ন পরে কইরেন টেম্পেয়ালারে হাসপাতালে নিয়া চলেন আগে, লোকটার অবস্হা খারাপ” মুরুব্বীরা বেশী প্রশ্ন করছিলো,

-“বাবা তুমগর কিছু হয় নাই তো”
-না চাচা! হয় নাই
-টাকা পয়সা, ব্যাগ নিয়া গেছে।

কেউ একজন টর্চ লাইট দিয়ে টেম্পো ওয়ালার ব্যাপারে নিশ্চিত হলো যে, রক্তে পুরো টেম্পুর সিট ভরে গেছে। একজন একটু বেশী কথা বলছিল, উনি এই এলাাকার গ্রাম সরকার। গ্রাম সরকার যখন কথা বলে তখন সবাই চুপ থাকে, এটা দেখে বুঝতে পারছিলাম বিশেষ কোনো ব্যক্তি কেউ হয়তো উনি।
গ্রাম সরকারঃ

-লিটন কয়রে? এদিকে আয়, তুই টেম্পু চালায়া অমিত ডাক্তারের কাছে নিয়া যা

-আইচ্ছা কাকা, আমার লগে আরো দুইজনরে দিয়া দেইন, ডর করে”

-গ্রাম সরকারঃ “অই!  তুমরা নামো তো”
-আমরা নেমে পরলাম, তুষি আগে নেমেছে।
-ডাক্তার অমিত রায় তার বাবার বন্ধু! আমার জানা ছিল না। তুষি নেমে গেছে তাই আমিও নেমে গেছি।

পর্বঃ ০৫ এর লিংকঃ 

Be the first to comment

Leave a Reply