সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক পর্ব- ৭

সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নব্বই দশক পর্ব- ৬

এ আই তরিকুল

কেরোসিনের ক্যান্টিন, টর্চ লাইট, বাঁশের লম্বা লম্বা লাঠি নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। হৈ হল্লোর চেচামেচি করে লাঠি নিয়ে দৌড়ানি দিবে, গ্রাম সরকারের বাড়ির লোকজন ভয়ে পালালে মইজ্জা আর সাহিদ আগুন লাগিয়ে দিবে। ব্যাস্ নাফরমান বিদায়। কথাগুলো (গ্রাম সরকার) মহিউদ্দিন চৌধুরীর চাচাতো ভাই আকরাম চৌধুরীর। জমি নিয়ে বিরোধ, সাংঘাতিক বিরোধ। একজন আরেকজনের ছয়াটুকু পর্যন্ত দেখতে পারে না। হিংসার আগুন জ্বলজ্বল করে। আকরাম তার বাহিনী নিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত।

-গোয়েন্দা লাগানো আছে,

-হ্যা

– বিয়া টা করতে দে

-একখান দিয়া বিয়ার কাম শেষ অইবো

আরেকখান দিয়া আমরা আমগোর কাম শুরু করমু, বুইরা বয়সে হিন্দু মাইয়ার সাথে বিয়ার সাধ মিটায়া দিমু আকরামের সারের ব্যবসা, ব্যবসার অবস্থাও ভালো। টাকা-পয়সার একটা কামড় আছে, সে এটা সামলাতে পারছে না। সন্ধা হয়ে গেছে, সন্ধার পরই বিয়ে হওয়ার কথা কিন্তু এখনো খবর আসছে না।

– কিগো আমগোর গোয়েন্দার খবর কি

-আইতাছে না যে এহনো?

গোয়েন্দাটা আর কেউ না, এই এলাকারই ছেলে নাম টা সঠিক মনে নেই তবে আমার সমবয়সী ই মনে হয়েছিল তখন। নব্বই দশকের স্মার্ট ছেলে সে, আকরামের ইয়ামাহা মোটর সাইকেলটা নিয়ে গ্রাম সরকারের বাড়ির সামনে আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখছিলাম। আমি তখনই বিষয়টা গ্রাম সরকার সাহেবকে জানিয়েছি, উনিই ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে আসলেন। চাচাতো ভাই আকরামের মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে, আকরামের সাথেই থাকে, সে হিসেবে তাকে খুব ভালো করেই চেনেন গ্রাম সরকার মহিউদ্দিন চৌধুরী।
– কিগো ভাইয়ে!
– কি খবর আপনার, জুয়ান মানুষ
-আর কত? বিয়া-শাদি করবা কবে?
– আহা! ভাইজান, কী-যে বলেন, করুম নেহ
– সবই উপর ওয়ালার ইচ্ছা
– একটু পরে থাইকো, শুভকাজের দাওয়াত
‌‌  থাইকো কিন্তু
– থাকমু নেহ
– কিন্তু কার বিয়া? ওইটা তো বুঝলাম না

আরে! আর বইলো না, ছেলে-মেয়ে পালায়ে আসছে, রাস্তায় ডাকাতে ধরছিল, পরে রাত্রে আর তাদেরকে যাইতে দেইনি ভাবছিলাম বিবাহিত হয়তো-বা সকালে সুমনের কাছ থেকে জানতে পারলাম তারা অবিবাহিত, বিয়ে করেনি। কারণ, মেয়েটা হিন্দু ধর্মের আর ছেলেটা মুসলিম। এখন তাদের বিয়ের দায়িত্ব আমি নিয়েছি, এই উসিলায় যদি তাদের কিছুটা উপকার হয়। আমি যদি তাদের বিয়ের দায়িত্বটা না-ই নিতাম তখন কী-হতো! এই দুজন ছেলে-মেয়ে কোথায় কি করতো? ব হ্যা, হ্যা, খুব ভালো কাজ করছেন ভাইজানকিন্তু, বিয়ে করাইবেন কিভাবে?

-বিয়া করাইতে হইলে তো মেয়ের অভিভাবক লাগবো, তাই না

-ধূর বেডা! কি যে কও, মাইয়া তার নিজের জ্ঞান বুদ্ধি তে বিয়া করবো। আমি কাজীর লগে কথা বইল্লা রাখছি, সমস্যা হইতো না, হয়া জাইবো। -আচ্ছা, ভাইজান আমি যাই এখন -এখন গেলে সময়মতো আসতে পারবা না একটু পরে একেবারে যাও। ওইযে, বারান্দায় বইসা আছে ছেলেটা হারিকেন জ্বলতাছে! দেখছো?
-ছেলেটার সাথে গিয়া বইসা আলাপ সালাপ
করো।
– না ভাইজান! বাড়িতে একটু কাজ আছে
গরু গোয়ালি তে নিতে হবে, অন্ধকার হয়া গেছে যাই এখন, একটু পরে আসতাছি।

গোয়ালঘরে গরু নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কোনোরকমে গ্রাম সরকারের কথা থেকে ছুটতে পেরেছে। এখন সোজা আকরাম চৌধুরীর কাছে
– ভাই! আপনে যা ভাবলেন তা না, মহিউদ্দিন
ভায়ের বিয়ে না
– তাইলে কার বিয়া?
– হিন্দু মাইয়ার লগে মুসলমান ছেলের বিয়া!
ওরা পালায়ে আসছে, এখন অদের বিয়া
করায় দিতাছে।

আগামী পর্বেঃ পর্ব:০৮

Be the first to comment

Leave a Reply